IQNA

বিদায় মুহূর্তে ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নিলেন ম্যার্কেল

0:03 - October 12, 2021
সংবাদ: 3470806
তেহরান (ইকনা): জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল গত ১৬ বছর ধরে তাঁর ক্ষমতার পুরো মেয়াদেই ইসরায়েলের নিরাপত্তার প্রতি তাঁর দেশের প্রতিশ্রুতির কথা বারবারই ব্যক্ত করে এসেছেন।
এমনকি এ-ও বলেছেন, ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের ব্যাপারে জার্মানির পরবর্তী সরকারগুলোও একই রকম অবস্থান নেবে বলে তাঁর দৃঢ়বিশ্বাস। কিন্তু চ্যান্সেলর হিসেবে বিদায়ের মুহূর্তে হঠাৎই এ অবস্থান যেন পাল্টে ফেললেন তিনি। বললেন, ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা, তাঁদের নিরাপত্তার অধিকারের কথা।  
 
আল–জাজিরার খবরে বলা হয়, জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেছেন, ইরানের সঙ্গে সম্পাদিত পারমাণবিক চুক্তির পুনরুজ্জীবন ও ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটের দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের বিষয়ে বার্লিন এখনো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ইসরায়েলের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেটের সঙ্গে জেরুজালেমে এক বৈঠক শেষে গতকাল রোববার এ মন্তব্য করেন তিনি।
 
জার্মানির চ্যান্সেলর হিসেবে বিদায় নেওয়ার আগে ইসরায়েল সফরে গেছেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল। সফরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনেটের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ইরান, ফিলিস্তিনসহ নানা বিষয়ে আলাপ করেছেন তিনি।
 
পরে চ্যান্সেলর ম্যার্কেল রোববার বেনেটের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে বলেন, ইরানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সই হওয়া পারমাণবিক চুক্তিকে পুনরুজ্জীবিত করতে জার্মানি এখনো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ম্যার্কেল এই মন্তব্য করলেও এ বিষয়ে ইসরায়েলের ঘোর আপত্তি রয়েছে। ইরানের পারমাণবিক ইস্যু ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা নিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে জার্মানির মতপার্থক্য চলার মধ্যেই এ কথা বললেন তিনি।
 
 
আঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেন, ফিলিস্তিনের সঙ্গে ইসরায়েলের কয়েক দশক ধরে চলা দ্বন্দ্ব-সংঘাত অবসানে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানই সেরা উপায় বলে মনে করে জার্মানি। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি মনে করি, বর্তমান পরিস্থিতিতে এ নিয়ে আশার তেমন কিছু না দেখা গেলেও দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের বিষয়টি আলোচনার টেবিল থেকে সরিয়ে ফেলা বা একে ধামাচাপা দেওয়া ঠিক হবে না। তা ছাড়া একটি রাষ্ট্র ছাড়া ফিলিস্তিনিরা নিরাপদে বসবাস করতে পারবে না।’
 
ম্যার্কেল আরও বলেন, অধিকৃত ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরায়েলের ইহুদি বসতি স্থাপনের কার্যক্রমও ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকট সমাধানে কোনো সহায়তা করেনি।
 
চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের এসব কথার জবাবে জবরদখল করা ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরায়েলের অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের সাবেক নেতা বেনেট ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেন। তিনি দাবি করেন, ‘আমাদের অভিজ্ঞতা হলো, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অর্থ হবে, খুব সম্ভবত একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্রকে প্রতিষ্ঠা করা। আমার বাড়ি, এমনকি ইসরায়েলের যেকোনো স্থান থেকে এটির দূরত্ব হবে গড়পড়তা সাত মিনিটের পথ।’
 
নিজেকে একজন ‘বাস্তববাদী মানুষ’ আখ্যায়িত করে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট বলেন, ফিলিস্তিনিদের জন্য রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার চেয়ে বরং পশ্চিম তীর ও গাজায় তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত তিনি।
‘দখলদারিই বড় সন্ত্রাসবাদ’
 
ইসরায়েলের এমন অবস্থানে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সম্পর্কের ওপর নজরদারির দায়িত্বপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা হোসেইন আল-শেখ টুইটারে লেখেন, ‘ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা নয়, বরং ইসরায়েল যে দখলদারি চালাচ্ছে, সেটিই সন্ত্রাসবাদের সবচেয়ে খারাপ একটি ধরন।’
 
ম্যার্কেলের দুই দিনের ইসরায়েল সফরে দুই দেশের মধ্যে হাতেগোনা যে কয়েকটি বিষয়ে মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয়েছে, ফিলিস্তিন তার অন্যতম। আঙ্গেলা ম্যার্কেল ক্ষমতায় থাকাকালে ইসরায়েলের প্রতি প্রায় অবিচল সমর্থন জানিয়ে এসেছে দেশটির ঘনিষ্ঠ মিত্র জার্মানি।
 
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনবিষয়ক পরিচালক ওমর শাকির ইসরায়েলের ৫৪ বছরের দখলদারিকে ‘সাময়িক’ বলে আখ্যায়িত করায় ম্যার্কেলের সমালোচনা করেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এই কল্পকাহিনির বিশ্বাসই ম্যার্কেল সরকারকে লাখ লাখ ফিলিস্তিনির প্রতি বর্ণবাদী আচরণ ও তাদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের বাস্তবতাকে এড়িয়ে চলার সুযোগ করে দিয়েছে।
 
ওমর শাকির আরও বলেন, ম্যার্কেল তাঁর ক্ষমতার পুরো মেয়াদে ইসরায়েলের নিরাপত্তার প্রতি তাঁর দেশের প্রতিশ্রুতির কথা বারবার ব্যক্ত করে এসেছেন। এ সময়ের মধ্যে তিনি এ-ও বলেছেন, ইসরায়েলের ব্যাপারে জার্মানির পরবর্তী সরকারও একই রকম অবস্থান নেবে বলে তাঁর দৃঢ়বিশ্বাস।
 
এ নিয়ে ম্যার্কেলের মন্তব্য ছিল এমন, ‘আমি আশাবাদী, আমার পর যে সরকার আসবে, সেটিসহ জার্মানির সব সরকার ইসরায়েলের নিরাপত্তার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে। আর আমি মনে করি, জার্মানির যেকোনো উত্তরসূরি চ্যান্সেলরও বিষয়টিকে এভাবেই দেখবেন।’
captcha