IQNA

অস্ট্রেলিয়ার ইসলামি জাদুঘর

0:02 - July 19, 2020
সংবাদ: 2611163
তেহরান (ইকনা): ‘ইসলামিক মিউজিয়াম অব অস্ট্রেলিয়া’ (আইএমএ)। অস্ট্রেলিয়ার উত্তর মেলবোর্নের থোর্নবারিতে স্থাপিত। ইসলামের ঐতিহাসিক শিল্পকর্ম এবং ইসলামি ইতিহাসের গতিধারা তুলে ধরার একটি অনবদ্য প্রয়াস এটি।

প্রতিষ্ঠানটিতে সন্নিবেশিত হয়েছে ইসলামি শিল্পকর্মের বর্ণিল আয়োজন। যেমন ইসলামি স্থাপত্যশিল্প, ক্যালিওগ্রাফি, চিত্রশিল্প, গ্লাস, সিরামিক ও বস্ত্রশিল্পের বৈচিত্র্যময় প্রদর্শনী। পাঁচটি গ্যালারিতে সাজানো এই মিউজিয়াম অত্যন্ত আকর্ষণীয় একটি স্থান।

ইসলামকে এভাবে তুলে ধরার উদ্যমী রূপকার মোস্তফা ফাহুর। তিনি সেখানকার নামকরা ব্যবসায়ী। ইসলামের শৈল্পিক সৌন্দর্য, ঐতিহ্য এবং অস্ট্রেলিয়ায় ইসলামের আগমন ও বিস্তার তুলে ধরার জন্যই মূলত প্রতিষ্ঠা করেছেন এই মিউজিয়াম।

আইএমএ’র পাঁচটি স্থায়ী গ্যালারি হলো ১. ইসলামিক বিশ্বাস গ্যালারি, ২. ইসলামি সভ্যতার অবদান, ৩. ইসলামিক শিল্প, ৪. স্থাপত্যশিল্প এবং ৫. অস্ট্রেলিয়ার মুসলমানদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য।

এসব গ্যালারি পরিদর্শনে যেকোনো পর্যটক ইসলামের সৌন্দর্য, ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং অস্ট্রেলীয় মুসলিম সম্প্রদায় সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারণা লাভ করতে পারবেন। গ্যালারিতে থাকে সার্বক্ষণিক দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা, যারা গ্যালারির বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে।

ইসলামি সভ্যতার অবদানবিষয়ক যে গ্যালারি আছে, সেখানে ইসলামের সোনালি যুগে মুসলমানদের অবদানের নানা বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। স্বর্ণালি যুগে চিকিৎসাশাস্ত্র, প্রকৌশল বিভাগ, রসায়নবিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, দর্শন, রাজনীতিবিজ্ঞান, জোতির্বিজ্ঞান এবং ভূগোলশাস্ত্রে মুসলমানদের অনন্য অবদানের বিষয়গুলো এই গ্যালারিতে সুনিপুণভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।

ইসলামিক শিল্পকর্ম গ্যালারিতে মুসলিমসভ্যতার শিল্পকর্ম, যেমন শিক্ষা-সংস্কৃতি, বিভিন্ন শিল্প ঐতিহ্য, রাজনীতি ইত্যাদি অত্যন্ত সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। আর ইসলামিক স্থাপত্যশিল্প গ্যালারিতে মুসলিম যুগের মুসলিম এমনকি অমুসলিম স্থাপত্যশিল্পগুলোর তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়েছে, যাতে যেকোনো পর্যটক বা আগতরা সেগুলো দেখে চমৎকৃত হন এবং ইসলামি স্থাপত্যকর্ম সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারণা লাভ করতে পারেন।

তবে সবচেয়ে মজার এবং আকর্ষণীয় হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার মুসলমানদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিষয়ক গ্যালারি। এই গ্যালারি পরতে পরতে অস্ট্রেলিয়ায় ইসলামের আগমন, বিকাশ ও সেখানকার মুসলমানদের ঐতিহ্য ও জীবনাচরণ ফুটে উঠেছে। এখানকার ইন্টারপ্রেটারের মতে, অস্ট্রেলিয়ায় ইসলামের আগমন ঘটে ১৭ শতকে। কাশ্মীরের উট ব্যবসায়ী দোস্ত মুহাম্মাদ তার উটের পাল নিয়ে ১৮৬০ সালে প্রথম অস্ট্রেলিয়ায় আসেন। তার মাধ্যমে দেশটিতে ইসলাম প্রচার শুরু হয়। তা ছাড়া এর কাছাকাছি সময় ইন্দোনেশিয়ার মাকাসসার থেকে একদল মুসলিম জেলে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন। তারা অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চলে ইসলাম প্রচার শুরু করেন।

এসব তথ্যচিত্র দেখানো হয়েছে এই গ্যালারিতে। তা ছাড়া ১৯ শতকে আফগানিস্তান, ভারত ও পাকিস্তান থেকে আগত মুসলমানরা কীভাবে দেশটিতে গমন করেন এবং ইসলাম প্রচার ও প্রসারে অবদান রাখেন তারও চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এই গ্যালারিতে। এসব দেশের মুসলমানরা প্রধানত পরিবহন, খনিজ ও পণ্য সরবরাহ সেক্টরে কাজ করেন এবং অস্ট্রেলিয়ার মানুষের সঙ্গে সম্পর্কের ভিত্তিতে ইসলাম প্রচারের সুযোগ পান। তাদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অস্ট্রেলিয়াবাসীর মধ্যে প্রভাববলয় তৈরি করে এবং ধীরে ধীরে সে দেশের মানুষ ইসলামে আকৃষ্ট হতে থাকে।

বলা আবশ্যক, আফগান, ভারত ও পাকিস্তানের মুসলমানরা আধুনিক অস্ট্রেলিয়া বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। বর্তমানে দেশটিতে জনসংখ্যার দুই শতাংশ অর্থাৎ প্রায় সাত লাখের মতো মুসলমান। এর আগে ২০০৩ সালের দিকে মুসলমানের সংখ্যা ছিল প্রায় চার লাখ।

আইএমএতে মহানবী (সা.)-এর জীবনীর ওপর গত ৬ মার্চ অত্যন্ত আকর্ষণীয় একটি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে থ্রিডি মডেলের অডিও ভিজ্যুয়ালের মাধ্যমে মহানবী (সা.)-এর জীবনের নানা দিক, তার মদিনাজীবন, সেখানকার বিভিন্ন উপজাতির বিভিন্ন লোকেশন, মহানবী (সা.)-এর উটের কাফেলার চিত্র, আবু আইউব আনসারী (রা.)-এর বাড়ি, পরিখার যুদ্ধের অবস্থান, মসজিদে নববি, হজরত আয়েশা (রা.)-এর ঘর, প্রথম কেবলা, মক্কায় মহানবী (সা.)-এর বাড়ি, কাবাঘর, বদরের প্রান্তর, নবীজির মদিনায় হিজরত প্রভৃতি বিষয় প্রদর্শন করা হয়।

এ ছাড়া আইএমএ নিয়মিত ক্যালিওগ্রাফি, চিত্রকর্মসহ নানা বিষয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করে। এসব অনুষ্ঠান অত্যন্ত জাঁকজমকভাবে পালিত হয় এবং সেখানে প্রচুর লোকসমাগম হয়। সব মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ইসলামিক মিউজিয়াম দেশটির মুসলমানদের ইতিহাস-ঐতিহ্য লালন, ধর্মীয় আচারকে পরিস্ফুটিত করতে এবং ইসলামি মূল্যবোধ দেশটির অন্য সম্প্রদায়ের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মুসলিম বোদ্ধারা আশা করছেন, এই মহতী উদ্যোগ অস্ট্রেলিয়ায় ইসলাম প্রচারে অবদান রাখবে।
সূত্র: fateh24

captcha