শাবিস্তানের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা ইকনা'র রিপোর্ট: ইসলামের আগমনের পূর্বে আরববাসীদের মধ্যে কী ধরনের অনৈক্য বিরাজিত ছিল তা ইতিহাসের পাঠক মাত্র সকলেরই জানা থাকার কথা। ইসলাম পূর্বকালে আরবের গোত্রগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সংঘাত ও শত্রুতা ছিল। কথায় কথায় লড়াই-ঝগড়া এবং দিনরাত খুনা-খুনি ও রক্তপাত লেগেই ছিল। এরই পরিণামে গোটা আরব জাতি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। এই নিশ্চিত ধ্বংস ও কঠিন অবস্থা হতে তাদেরকে ইসলামই রক্ষা করেছিল।
ইসলাম হচ্ছে মুমিনদের জন্য একটি অনুগ্রহ ও আশীর্বাদ। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কালামে উল্লেখ করেছেন : ‘এবং তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহকে স্মরণ কর। তোমরা ছিলে পরস্পর শত্রু এবং তিনি তোমাদের হৃদয়ে প্রীতির সঞ্চার করেন। ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা পরস্পর ভাই হয়ে গেলে। তোমরা অগ্নিকুণ্ডের প্রান্তে ছিলে,আল্লাহ তা হতে তোমাদেরকে রক্ষা করেছেন। এইরূপে আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর নিদর্শন স্পষ্টভাবে বিবৃত করেন যাতে তোমরা সৎপথ পেতে পার।- সূরা আলে ইমরান : ১০৩
‘আল্লাহর রজ্জু’ অর্থে এখানে আল্লাহর দীনকেই বোঝানো হয়েছে। একে রজ্জু এজন্যই বলা হয়েছে যে,এ সূত্র দ্বারাই এক দিকে আল্লাহর সাথে ঈমানদার লোকদের সম্পর্ক স্থাপন হয়। অন্যদিকে সমস্ত ঈমানদার লোককে পরস্পর ঐক্যবদ্ধ ও মিলিত করে একটি দৃঢ় ও শক্তিশালী জাতি তথা মুসলিম মিল্লাতে রূপান্তরিত করা হয়। এই রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করার অর্থ এই যে,মুসলমানদের দৃষ্টিতে মৌলিক গুরুত্বে আল্লাহর দীনের হওয়া বাঞ্ছনীয়। এ দীনকে আল্লাহর জমিনে প্রতিষ্ঠা করার জন্য চেষ্টার অনুবর্তী হওয়া প্রতিটি মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য।
ইসলামের পূর্বে আরববাসী যে কদর্য অবস্থার মধ্যে নিপতিত ছিল তা থেকে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে এ দীনের মাধ্যমেই রক্ষা করছেন এবং বলেছেন,এখন থেকে তোমরা পরস্পর ভাই হয়ে গেলে,কাজেই তোমরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না,পরস্পর বিবাদ-বিসম্বাদে লিপ্ত হবে না। আল্লাহ তাআলা অন্যত্র বলেছেন : ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে এবং নিজেদের মধ্যে বিবাদ করবে না,করলে তোমরা সাহস হারাবে এবং তোমাদের শক্তি বিলুপ্ত হবে। তোমরা ধৈর্যধারণ করবে,আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন।’- সূরা আনফাল : ৪৬
মহানবী (সা.)-এর আবির্ভাবের ফলে পৃথিবীতে এক বিস্ময়কর ও ব্যাপক পরিবর্তন সূচিত হয়। প্রাক-ইসলাম যুগের যাবতীয় কুসংস্কার,অন্ধ অনুসরণ এবং ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত সংঘর্ষ অপসৃত হয়ে সেখানে প্রতিষ্ঠিত হয় এক তাওহীদভিত্তিক ভ্রাতৃত্বের সমাজ- যা ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে একান্তই বিরল। মহানবী (সা.)-এর জন্মদিনে আমাদেরকে মূল্যায়ন করতে হবে ঐক্যের সে তাৎপর্য।